হজের অন্যতম আমল হলো কোরবানি তথা পশু জবাই করা। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন যে ব্যক্তি ওমরাহসহ হজ পালন করবে, তবে যে পশু সহজ হয়, তা জবাই করবে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৯৬)

তাই কিরান ও তামাত্তু হজ আদায়কারীদের ওপর তা পালন করা ওয়াজিব। যেহেতু তারা একই সফরে ওমরাহসহ হজ পালন করে থাকে।ইফরাদ হজ আদায়কারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, তবে করলে ভালো। (মানাসিকে মোল্লা আলি কারি, পৃষ্ঠা-৪৭৮)
যার সামর্থ্য আছে তার জন্য একাধিক কোরবানি করা উত্তম। হাদিস শরিফে হজের মধ্যে বেশি বেশি তালবিয়া পড়তে ও কোরবানি করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। তা ছাড়া নবীজি (সা.) বিদায় হজের সময় ১০০টি উট কোরবানি করেছিলেন।
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৭১৮)

কোরবানির পশুর বিবরণ

ঈদুল আজহার কোরবানির পশুর গুণাগুণ সম্পর্কে যেসব বিবরণ ও শর্ত আছে, হজের কোরবানির পশুর ক্ষেত্রেও সেই শর্তগুলো প্রযোজ্য। উট, গরু ও মহিষ দুই বছরের এবং বকরি, ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে এক বছর বয়সী হতে হবে। আর পশুটি কোরবানি শুদ্ধ না হওয়ার মতো সব সংকট থেকে মুক্ত হতে হবে। উট, গরু ও মহিষের মধ্যে সর্বাধিক সাতজন অংশীদার থাকতে পারবে। (মানাসিক, পৃষ্ঠা-৪৭৮)

কোরবানির সময়

১০ জিলহজ সুবহে সাদিকের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় কোরবানি করলে কোরবানির ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে ১০ তারিখ বড় শয়তানকে পাথর মারার আগে কোরবানি করলে দম ওয়াজিব হবে। তাই বলা যায়, হাজিদের জন্য কোরবানির সময় শুরু হয় ১০ তারিখ বড় শয়তানকে পাথর মারার পর থেকে। কোরবানির পশু জবাই হওয়া নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল হলক করে হালাল হতে পারবে, কোরবানির পূর্বে হলক করে ফেললে কাফফারাস্বরূপ আরেকটি পশু জবাই করতে হবে। (মানাসিক, পৃষ্ঠা-২৬৩)

কোরবানির স্থান

হজের কোরবানির পশু ও কাফফারা তথা জরিমানার পশু হারামের সীমার মধ্যে জবাই করা আবশ্যক।

হারামের বাইরে জবাই করলে কোরবানি ও কাফফারা কোনোটাই আদায় হবে না। হারামের যেকোনো স্থানেই কোরবানি করা যায়। মিনায় কোরবানি করা জরুরি নয়। (রদ্দুল মুহতার : ২/৫৩২)

হজের কোরবানির গোশতের বিধান

হজের কোরবানির গোশতের বিধান ঈদুল আজহার কোরবানির গোশতের মতোই। নিজেও খেতে পারবে, অন্যকেও খাওয়াতে পারবে, দান-সদকাও করতে পারবে, জমিয়েও রাখতে পারবে। তবে জরিমানাস্বরূপ যে দম দেওয়া হয় তার গোশত নিজেরা খাওয়া যাবে না, বরং দরিদ্রদের সদকা করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৬৩৬)

যার কোরবানির সামর্থ্য নেই

তামাত্তু ও কিরান হজকারীর ওপর হজের কোরবানি করা ওয়াজিব। কারো যদি এই কোরবানি করার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে তাকে কোরবানির পরিবর্তে ১০টি রোজা রাখতে হবে। ১০ তারিখের আগে তিনটি রোজা রাখতে হবে, বাকি সাতটি হজ থেকে পরিপূূর্ণরূপে অবসর হয়ে সুযোগমতো যেকোনো সময় এবং যেকোনো স্থানে রাখতে পারবে। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৯৬)

আর ১০ তারিখের আগে যদি তিনটি রোজা না রাখা হয় তাহলে কোরবানি করাই নির্ধারিত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ১০ তারিখ কোরবানির কোনো ব্যবস্থা না হলে কোরবানি না করেই সে হলক করে হালাল হয়ে যাবে। এরপর যখন সক্ষম হবে তখন হারামের সীমানার মধ্যে দুটি পশু জবাই করতে হবে। একটি হজের কোরবানির জন্য, আরেকটি কোরবানি না করে হালাল হওয়ার দম হিসেবে। (মানাসিক, পৃষ্ঠা-২৬৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২৬৪)

হাজিদের জন্য ঈদুল আজহার কোরবানির বিধান

১০ জিলহজ সুবহে সাদিক থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত এই তিন দিন যদি কেউ মুসাফির থাকে, তাহলে তার ওপর ঈদুল আজহার কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। অতএব, কোনো হাজি সাহেব যদি উক্ত সময়ে মুসাফির থাকে তাহলে তার জন্য ঈদুল আজহার কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। আর যদি মক্কা শরিফে ১৫ দিনের বেশি অবস্থানের কারণে মুকিম হয়ে থাকে, তাহলে হজের কোরবানি ছাড়াও ঈদুল আজহার জন্য ভিন্ন কোরবানি করতে হবে। ঈদুল আজহার কোরবানি মক্কা-মিনাতেও করতে পারে, কিংবা দেশের বাড়িতেও করতে পারে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৬৪৪)