সিলেট মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নগরের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা সুরমা নদীর পানি বেড়ে এ জলাব্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পর থেকে মহানগরের তালতলা, মেন্দিবাগ, মাছিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে সড়কে পানি উঠতে শুরু করে। শুক্রবার সকালে তালতলা ও মেন্দিবাগ-মাছিমপুর সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক দুটিতে প্রায় হাঁটু পানি জমে গেছে। 

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে একটু একটু করে পানি বাড়ছে। সেই পানি বৃদ্ধি সকাল পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, নগরের তালতলাস্থ সিলেটের ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়েও পানি প্রবেশ করেছে বৃহস্পতিবার রাতে। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেন।সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী জানান, সুরমা নদীতে পানি বেড়েছে এবং সকালে আমরা গিয়ে দেখলাম- পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে নগরের কাজিরবাজারসহ যেসব ড্রেন সুরমায় পড়েছে সেসব ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশনের বদলে উল্টো পানি ঢুকছে। এর জন্য কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে যদি আজ দিনের বেলা বৃষ্টি না হয় তবে সে পানি নেমে যাবে। তিনি বলেন, সকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে সিটি করপোরেশন।

এর আগে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়ায় বৃহস্পতিবার জরুরি সভা করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরভবনের সভাকক্ষে এ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামরান। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সভায় সকল প্রকার জরুরি সেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সভায় মহানগরের কয়েকটি ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং এসব ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুতের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। শুক্রবার থেকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী প্রেরণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় উদ্ধার কাজের জন্য নৌকার ব্যবস্থা, নিম্নাঞ্চলের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, উপ-কেন্দ্রগুলো বন্যার পানিতে যাতে ডুবে না যায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের কতৃর্পক্ষের সাথে আলোচনা করে সহযোগিতা প্রদান, নগরবাসীর জরুরি সেবার জন্য ২৪ ঘন্টা কন্ট্রোল রুম চালুসহ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে রান্না করা খাবার পরিবেশনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে ৩ টন চিড়া, ৩ টন মুড়ি, গুড়, খাবার পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং ওরস্যালাইন ক্রয় করেছে সিসিক। 

সভায় জনস্বার্থে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়। 

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, সিসিক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরানের সাথে আলোচনা করে জরুরি সভা আহ্বানের নির্দেশনা প্রদান করেন। পাশাপাশি সিসিক মেয়র জরুরি ত্রাণ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সাথেও আলোচনা করেছেন।

সাজলু লস্কর আরও জানান, দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য্য ও সাহসের সাথে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এছাড়াও তিনি মসজিদ, মন্দিরসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনা করার জন্য নগরবাসীর কাছে অনুরোধ জানান। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাহায্যের জন্য ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম অথবা ভারপ্রাপ্ত মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।