ফেনীর সোনাগাজীর মোস্তাফিজুর রহমান খোকা। ১৪ বছর আগে গায়ে হলুদের দিন নিখোঁজ হন তিনি। অনেক খোঁজাখুজির পরও মেলেনি তার কোনো সন্ধান। অবশেষে ১৪ বছর পর তাকে ফিরে পেল পরিবার।

এদিকে খোকাকে ফিরে পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে আনন্দের জোয়ার। এতোদিন খোকার মায়ের চোখ থেকে সন্তানের জন্য ঝরা পানি বন্ধ হয়েছে দুইদিন আগে। এক মেয়ে ও এক ছেলের পরিবার থেকে ছেলে নিখোঁজ থাকায় এতোদিন ছিল তিনি জীবন্ত লাশ। চোখ থেকে পানি ঝরতে ঝরতে চোখের কোনায় জমেছে তার দাগ। ছেলেকে ফিরে পেয়ে তার মুখে ফুটেছে হাঁসি। জানা গেছে, সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের পালগিরি গ্রামের জালাল মেম্বার বাড়ির মৃত আবদুর রাজ্জাকের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান খোকা। ২০১০ সালের এপ্রিল মাসর প্রথম সপ্তাহে ছিল তার গায়ে হলুদের জন্য নির্ধারিত সময়। বাড়িতে করা হয়েছিল হলুদের সকল আয়োজন। কিন্তু গায়ে হলুদের পাঞ্জাবি না কেনায় খোকা রওনা দেন ফেনী শহরের দিকে। দীর্ঘ সময় বাড়িতে ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি শুরু করে পরিবার। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরিবার শরণাপন্ন হয় পুলিশের। সোনাগাজী মডেল থানায় করেন একটি নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি। তরপর থেকে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাকে খোঁজ করা হয়। দেয়া হয় জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন।  

অবশেষে ১৪ বছর পর খোকার সন্ধান পেয়ে গত ৩০ মে বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটির তবলছড়ি কেন্দ্রীয় মসজিদ এলাকা থেকে খোকাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে তার পরিবার। এসময় তারা নেন স্থানীয়দের সহযোগীতা। 
 
খোকার বোন বিবি রহিমা নাজমা জানান, কিছুদিন আগে তাদের পাশের বাড়ির আকাশ রাঙ্গামাটিতে তার ভাইকে দেখতে পায়। বিষয়টি তাকে জানালে সে ভাইকে ফিরে পেতে তার সহযোগিতা নেয়। প্রথমে ভিডিও কলে খোকাকে দেখেই সে ভাইকে শনাক্ত করে। পরে সোনাগাজীর স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সুফিয়ানসহ তারা ৭ জন রাঙ্গামাটির তবলছড়ি কেন্দ্রীয় মসজিদ এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে। স্থানীয় মোস্তফা নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তাকে পাওয়া যায়। খোকার বোন রহিমা জানান, যে ঘরে তার ভাই ছিলো তারা খুবই ভালো লোক। খোকাকে ফিরে পেতে তারা প্রচুর সহযোগীতা করেছে। পরে তাদের সহযোগিতায় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে তার ভাইকে বাড়িতে নিয়ে আসে। 

ইউপি সদস্য আবু সুফিয়ান বলেন, খোকা এখনও ঠিক আগেরমতো আছে। তার পুরনো কিছু মনে নেই। তবে চলমান অতিত মনে আছে। এমনিতে সে পুরোপুরি সুস্থ আছে।
 
পরিবারের সদস্যরা জানান, খোকার ১৪ বছর আগের কোনো ঘটনাই বলতে পারছে না। আমাদের ধারণা কেনাকাটা করার জন্য ফেনী যাওয়ার পথে হয়তো মলম পার্র্টির খপ্পরে পড়ে সে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তাই সে এতোদিন নিখোঁজ ছিল। 

খোকার মা জানান, খোকাকে ফিরে পেয়েও তিনি আল্লাহর দরবারে হাজার শুকরিয়া আদায় করছেন। তার খোকার অতিত মনে নেই। মা-বাবা বা অতিতের স্মৃতি মনে উঠছে না। তবে সে বুঝেছে আমি তার মা ও নাজমা তার বোন। এটা তার বাড়ি।   

স্থানীয়রা জানান, খোকাকে ভালো ডাক্তার দেখালে হয়তো ফিরে আসবে তার অতীত স্মৃতি। খোকার মা ও বোন এখন আশা বুনছে খোকাকে বিয়ে করাবে। তাকে সংসারী করবে। 

মোস্তাফিজুর রহমান খোকার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি সম্পূর্ণ ঠিক আছি। এতোদিন মানুষ আমাকে নিয়ে হাঁসাহাঁসি করতো। আমাকে বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাস করলে আমি বলতাম জানি না। বিয়ে করেছি কিনা জানতে চাইলেও বলতাম জানি না। আমি এতোদিন রাঙ্গামাটি ছিলাম। সেখাসে মিস্ত্রিরির কাজ করতাম। যেহেতু নাজমা বলছে সে আমার বোন। আমার মনে হচ্ছে সে বোন হতে পারে। উনি আমার মা বলছেন। উনি মা হতে পারে। আমার ছোট বেলার কিছু মনে নেই।