বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এবং সব পয়েন্টে নদ-নদীর পানি কমায় সিলেটে রবিবার তৃতীয় দিনের মতো বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরছে অনেকে। মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিলেটের পাঁচ উপজেলায় বন্যার চার দিনে ভেসে গেছে এক হাজার ৫৮৩ হেক্টর বিস্তৃত সোয়া আট হাজারের বেশি পুকুর, দিঘি ও খামারের মাছ। মৎস্য খাতে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বন্যায় সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে মৎস্য খাত। এসব উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত জলাধারের আয়তন এক হাজার ৫৮৩ হেক্টর। বন্যায় ১৬ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার মাছের ও দুই কোটি ৬৩ লাখ তিন হাজার টাকার পোনার ক্ষতি হয়েছে। মত্স্য খাতের অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ৮৪ লাখ টাকার। সব মিলিয়ে এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ১৯ কোটি ৭০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
সিলেটে বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলায়। এই উপজেলায় দুই হাজার ১০০ পুকুর, দিঘি ও খামার ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে ছয় কোটি ৯৮ লাখ টাকার মাছ এবং ৬০ লাখ টাকার পোনা মাছের ক্ষতি হয়েছে। উপজেলায় মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ সাত কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার মৎস্য খাতের বিনিয়োগকারীরা। বন্যায় উপজেলার ৫১০টি পুকুর, দিঘি ও খামারের ৫৭২ কোটি টাকার মাছ এবং ৪২ কোটি টাকার মাছের পোনার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলায় মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ ছয় কোটি ২০ লাখ টাকা। সংখ্যার হিসাবে সবচেয়ে বেশি তিন হাজার ৩০০টি পুকুর, দিঘি ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কানাইঘাট উপজেলায়। এখানে ৪০৭ হেক্টর জলাধারের এক কোটি ৫৪ লাখ টাকার মাছ এবং ১৮ লাখ টাকার পোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবকাঠামোসহ উপজেলায় এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ এক কোটি ৮২ লাখ টাকা। জৈন্তাপুর উপজেলায় বন্যা দুই হাজার ৭৫টি পুকুর, দিঘি ও খামারের ৭২ লাখ টাকার মাছ এবং এক কোটি আট লাখ টাকার পোনা মাছ ভাসিয়ে নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় অবকাঠামোগত। উপজেলায় মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা ২৯টি পুকুর, দিঘি ও খামারের এক কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার মাছ এবং ৩৫ লাখ টাকার পোনা মাছ ভাসিয়ে নিয়েছে। অবকাঠামোসহ উপজেলায় মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৭৩ লাখ ১০ হাজার টাকার। 

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের রবিবার সন্ধ্যার রেকর্ড অনুযায়ী, কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি আগের দিন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও রবিবার বিপৎসীমার এক সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জকিগঞ্জের অমলসিদে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। উজানের উপজেলাগুলোতে বন্যার পানি কমায় তুলনামূলক নিচু ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি হঠাৎ বেড়ে বিপৎসীমার আট সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি কমায় নগরের জলাবদ্ধ এলাকাগুলোর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। নগরের উপশহর, তেররতন, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, কাজিরবাজার এলাকা ঘুরে এমনটা দেখা গেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান গণমাধ্যমে বলেন, নদীর পানি রবিবার বিপৎসীমার নিচে নামায় নগর এলাকায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকলে দু-এক দিন পরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সজল কুমার রায় গণমাধ্যমে বলেন, পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত উন্নতির দিকেই। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি কমছে। তবে দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে পানি একটু ধীরগতিতে কমতে পারে এ সময়। এ ছাড়া দেশের অন্য কোনো অঞ্চলে এই মুহূর্তে বন্যার ঝুঁকি নেই।