আল্লাহ তাআলাই রিজিকদাতা—এ কথা ধার্মিক মানুষ মাত্রই বিশ্বাস করে। আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক মানুষ লাভ করে বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে। এই রিজিক তিনি দান করেন নিজ অনুগ্রহে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু।
তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ১৯)
সব প্রাণীর স্বাভাবিক চাহিদা অনুযায়ী তাদের খাদ্য ও জীবিকার ব্যবস্থা করা আল্লাহ তাআলা নিজের দায়িত্বে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জমিনে বিচরণকারী যত প্রাণী আছে, সবার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর (আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে তাদের রিজিক নিজের দায়িত্বে রেখেছেন)।এবং তিনি জানেন তাদের অবস্থানস্থল ও তাদের সমর্পণস্থল (যেথায় তারা সমর্পিত হয়) সব কিছু সুস্পষ্ট কিতাবে বিদ্যমান আছে।’
(সুরা : হুদ, আয়াত : ৬)
সাধারণ মানুষ মনে করে, রিজিক বা জীবিকা আসে চাকরি, ব্যবসা বা চাষাবাদের মাধ্যমে। কিন্তু কোরআনের ঘোষণা হলো রিজিকের সিদ্ধান্ত হয় আসমানে। আল্লাহ বলেন, ‘আকাশে আছে তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু।’
(সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২২)
কোনো মানুষের নির্ধারিত রিজিক ভোগ করার আগে মৃত্যু আসবে না। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো। কেননা কোনো ব্যক্তিই তার জন্য নির্ধারিত রিজিক
পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মরবে না, যদিও তার রিজিকপ্রাপ্তিতে কিছু বিলম্ব হয়।…
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৪৪)
তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ দ্রুততার সঙ্গে অর্থ উপার্জনের চেষ্টায় থাকে। যেকোনো উপায়ে তারা আয়ের ব্যবস্থা করতেও দ্বিধান্বিত হয় না।
সুতরাং স্বল্প সময়ে বেশি উপার্জন করাই তাদের অভীষ্ট উদ্দেশ্য ও ঈপ্সিত লক্ষ্য হয়ে থাকে। যার ফলে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে যে নির্ধারিত জীবিকা পেত, তার সীমা লঙ্ঘন করে দ্রুত উপার্জন করতে চেষ্টা করে। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) তা নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘হে লোক সকল! আমি সেসব বিষয়ে তোমাদের নির্দেশ প্রদান করেছি, যেগুলো তোমাদেরকে জান্নাতের নিকটবর্তী করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। আর যেসব বিষয় তোমাদেরকে জাহান্নামের নিকটবর্তী করবে এবং জান্নাত থেকে দূরে রাখবে সেসব বিষয়ে তোমাদেরকে নিষেধ করেছি। নিশ্চয়ই
রুহুল আমিন, অন্য বর্ণনায় রুহুল কুদুস (জিবরিল) আমার অন্তরে অবতীর্ণ করেছেন যে রিজিক পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কেউ মরবে না। অতএব, হে মানবমণ্ডলী! আল্লাহকে ভয় করো। আর জীবিকা অন্বেষণে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো, জীবিকা আসতে বিলম্ব হলে অবশ্যই আল্লাহর অবাধ্যতা করে তা অর্জন কোরো না। কেননা আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া তাঁর কাছে যা আছে তা পাওয়া যায় না।’
(সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিস : ২৬০৭)
দ্রুত ধনী হওয়ার চেষ্টা করার কারণ হলো মাত্রাতিরিক্ত লোভ ও অল্পে তুষ্ট না হওয়া। আর অতিরিক্ত লোভের বশবর্তী হয়ে মানুষ চুরি-ডাকাতি করতেও দ্বিধা করে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ছাগলের পালে দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘ ছেড়ে দিলে তা যতটুকু না ক্ষতি সাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতি সাধন করে তার দ্বিনের।’
(তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৬)
স্বভাবগতভাবে মানুষের মধ্যে তাড়াহুড়া করার প্রবণতা আছে। সে দ্রুত সব কিছু পেতে চায়। সব কিছু ভোগ করতে চায়। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম হলো নির্ধারিত সময়ে ধীরে ধীরে জীবনোপকরণ হাতে আসে।
কেউ যদি বৈধ পথ ছেড়ে অবৈধ পথে রিজিক অন্বেষণে লিপ্ত হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য হালাল রিজিকের দরজা বন্ধ করে দেন। তার ভাগ্যে তখন আর হালাল জিনিস জোটে না। এবং সে এই হারাম উপার্জনে সন্তুষ্ট থাকে। একবার আলী (রা.) কুফা নগরীর মসজিদে প্রবেশ করেন। তখন তিনি মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা এক বালককে তাঁর বাহন দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। আর তিনি মসজিদে নামাজ আদায় করেন। নামাজ আদায়ের পর তিনি ওই বালককে প্রতিদানস্বরূপ দুই দিরহাম দেওয়ার ইচ্ছা করেন। কেননা সে এতক্ষণ যাবৎ তাঁর বাহন দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখলেন, বালকটি সেই বাহনের লাগাম নিয়ে পালিয়ে গেছে। আর বাহনটি একাই দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তিনি সেই বাহনে চড়ে চলে গেলেন। এরপর তিনি তাঁর গোলামকে দুই দিরহাম দিয়ে বলেন বাজার থেকে একটি লাগাম নিয়ে আসার জন্য। গোলাম বাজারে গিয়ে দেখলেন, ওই চোর (বালক) দুই দিরহামে সেই লাগাম বিক্রি করছে। গোলাম সেই লাগাম নিয়ে আলী (রা.)-এর দরবারে হাজির হলেন। এটা দেখে আলী (রা.) (বিস্মিত হয়ে) বলেন, ‘আমি তাকে বৈধ পন্থায় দুই দিরহাম দিতে চেয়েছি; কিন্তু সে হারাম পন্থায় তা অর্জন করল। বান্দা ধৈর্য না ধরার কারণে নিজেই বৈধ রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।’ (আল-মুসতাতরাফ : ৮১)
পূর্ব নির্ধারিত রিজিক নিয়ে মানুষ নানা হতাশায় জর্জরিত হয়। অনৈতিক ও অবৈধ পন্থায় বেশি রিজিক অন্বেষণে লালায়িত থাকে। তবে প্রকৃত মুমিনের কর্তব্য হলো বৈধ উপায়ে আল্লাহ প্রদত্ত রিজিকের ওপর সন্তুষ্ট থাকা।