পৃথিবীটা বৈচিত্র্যময় মানুষের একটি আবাসস্থল। এতে বাস করে সুখী-দুঃখী, ধনী-গরিব, সাদা-কালো বিভিন্ন পর্যায়ের জনগোষ্ঠী। এ পৃথিবীতে কেউ আছে রাজা, কেউ প্রজা। কেউ থাকে ফুটপাতে, কেউ মহলে।
বৈচিত্র্যময় এ জীবনযাত্রায় সবার লক্ষ্য নির্মল শান্তির নীড় গড়া। হৃদয়ে সবাই আঁকে আনন্দ সুখের পরশে উজ্জীবিত হওয়ার স্বপ্ন। তবে সবই মহান আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। তাঁর ইচ্ছায় কেউ সুখ-শান্তির সৌভাগ্য লাভ করে। কারও ভাগ্যে নেমে আসে দুঃখ, বেদনা, মহামারি, অশান্তি ও বিষাদ-ক্লিষ্ট। আসে অভাব-অনটন, পরাজয়, অসম্মান ও মহাবিপদের গ্লানি। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে সবই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি এবং ফলফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৫).
অন্য আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘অবশ্যই ধনসম্পদে ও জনসম্পদে তোমাদের পরীক্ষা হবে এবং নিশ্চয়ই তোমরা শুনবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবদের কাছে এবং মুশরিকদের কাছে বহু অশোভন উক্তি। আর যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং খোদাভীতি অর্জন কর তবে তা হবে একান্ত দৃঢ় সংকল্পের কাজ।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৬).
কখনো আপদ-বিপদ ও সংকট, সমস্যা মানুষের পাপাচার ও অন্যায়ের কারণে এসে থাকে। যেন তারা পাপ ও অন্যায় থেকে সতর্ক হয়ে যায়। এ হিসাবে বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এক ধরনের অনুগ্রহ।
আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের কিছু কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা রুম, আয়াত ৪১).
ইবনে ওমর (রো.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখনই প্রকাশ্য অপকর্মে লিপ্ত হবে তখনই এমন মহামারি ও দুর্ভিক্ষে পতিত হবে যা তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনো প্রত্যক্ষ করা যায়নি। যখন তোমরা মাপে কম করবে, অভাব-অনটন ও অত্যাচারী শাসকের নির্যাতনের শিকার হবে। যখন তোমরা জাকাত আদায় বর্জন করবে, অনাবৃষ্টির শিকার হবে। যখন আল্লাহ ও রসুলের বিধান পালনে উদাসীন হবে, তোমরা শত্রু মাধ্যমে আক্রান্ত হবে। আর যখন খোদাপ্রদত্ত কিতাবের বিধান পরিহার করবে, তোমরা দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত হবে।’ (ইবনে মাজাহ).
গোটা বিশ্বের মানুষ আজ বহুমুখী সংকটের সম্মুখীন। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারি ও যুদ্ধবিগ্রহের অমানবিকতায় পিষ্ট হচ্ছে গোটা বিশ্ব। ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নানামুখী সংকটে হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত নিঃস্ব হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। যুদ্ধপ্রেমিকদের রোষানলে ধুঁকছে অসহায় মানুষ। গোটা পৃথিবী প্রভাবিত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। বিশ্ববাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুতে জোগান সংকট তীব্র হচ্ছে।
অন্যদিকে অতিরিক্ত চাহিদা মুদ্রাস্ফীতিসহ বিভিন্নমুখী দুর্ভোগ তৈরি করছে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশে দেশে সৃষ্টি হচ্ছে কৃত্রিম সংকট, অনাকাক্সিক্ষত দুর্ভিক্ষ। সব ধরনের সংকট নিরসনে ইসলামের টেকসই সমাধান হলো আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া। তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধ করবেন এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদীনালা।’ (সুরা নুহ, আয়াত ১০-১২)।
এছাড়া আমাদের এ সংকটকালে ধৈর্য ও সহনশীলতা অবলম্বন করতে হবে। অবলম্বন করতে হবে তাকওয়া। সুদৃঢ় করতে হবে ইমানি শক্তি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি সেই জনপদের অধিবাসীরা ইমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করে দিতাম।’
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।