আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে নিজেকে যে সুমহান গুণাবলি দ্বারা বিশেষায়িত করেছেন এবং তাঁর রাসুল মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর যেসব গুণ বর্ণনা করেছেন, কোনো ধরনের পরিবর্তন ছাড়া সেগুলোর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক। এসব গুণের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা আল্লাহর সত্তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করার নামান্তর।

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার ক্ষেত্রে আল্লাহর যেসব গুণ তিনি এবং তাঁর রাসুল উল্লেখ করেছেন, সেগুলো আমরা আল্লাহর জন্য ঠিক সেভাবেই সাব্যস্ত করব, যেভাবে তাঁরা করেছেন। এই গুণগুলো যে শব্দে বর্ণিত হয়েছে এবং সেগুলো যে অর্থ প্রদান করেছে, তা অক্ষুণ্ন রাখা আবশ্যক।কোনোভাবেই তা কোরআন ও সুন্নাহর সীমা অতিক্রম করবে না।

আল্লাহর গুণ বর্ণনায় সতর্কতা

মহান আল্লাহর গুণ বর্ণনায় নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।

১. পরিবর্তন নিষিদ্ধ : আল্লাহর গুণ বর্ণনার সময় দুইভাবে তাতে পরিবর্তন চলে আসতে পারে—

শাব্দিক পরিবর্তন : যে শব্দগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর সিফাতগুলো বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোকে অন্য শব্দ দ্বারা বদল করা। এই ধরনের পরিবর্তন এক শব্দের সঙ্গে অন্য অক্ষর বা শব্দ যুক্ত করে অথবা অক্ষর কমানোর মাধ্যমে হতে পারে।


আবার শব্দের জের, জবর ও পেশ পরিবর্তন করার মাধ্যমেও হতে পারে। যেমন—কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ মুসার সঙ্গে কথা বলেছেন, ঠিক যেমনভাবে কথা বলা হয়।’
(সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪৬)

এখানে ভ্রান্ত লোকেরা আল্লাহ শব্দের ‘হা’ বর্ণে পেশের বদলে জবর পড়ে। তখন অর্থ দাঁড়ায়— ‘আল্লাহ মুসার সঙ্গে কথা বলেননি; বরং মুসা আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছেন।


তারা এটা করে থাকে আল্লাহর একটি গুণ অস্বীকার করার জন্য। তা হলো,ওহির মাধ্যমে কথা বলা।
অর্থগত পরিবর্তন : তা হলো আল্লাহর  গুণাবলির অর্থ পরিবর্তন করে ফেলা। যেসব শব্দের মধ্যে আল্লাহর গুণাবলি ও সিফাত বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলোর মূল অর্থ পরিবর্তন করে অন্য অর্থ প্রদান করা। যেমন—রহমত বা দয়া করা আল্লাহর গুণগুলোর অন্যতম।


কিন্তু একদল লোক আল্লাহর দয়ার গুণ অস্বীকার করে এবং বলে, রহমত অর্থ হচ্ছে নিয়ামত প্রদানের ইচ্ছা করা।
২. বাতিল বা অস্বীকার করা : তা হলো আল্লাহর কোনো গুণ বর্ণনায় তাতে কোনো পরিবর্তন না এনে সরাসরি অস্বীকার করে বসা। যেমন—আল্লাহর জ্ঞান সর্বব্যাপী। কিন্তু কোনো কোনো ভ্রান্ত লোকেরা বলে আল্লাহ সব মৌলিক বিষয় জানলেও তিনি আনুষঙ্গিক ও ক্ষুদ্র বিষয়গুলো জানেন না।

৩. গুণাবলির ধরন ও কায়া নির্ধারণ করা : এটা হলো আল্লাহর গুণ ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করার সময় এর নির্ধারিত ধরন ও কায়া বর্ণনা করা, তাঁর জন্য বিশেষ কোনো অবস্থা স্থির করা। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর গুণ ও বৈশিষ্ট্যের ধরন ও কায়া নির্ধারণ করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা আল্লাহর সিফাতের প্রকৃত অবস্থা ও ধরন সেসব বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত, যার ইলম কেবল আল্লাহর কাছেই আছে। কোনো সৃষ্টির পক্ষে সেই জ্ঞান অর্জন করা অসম্ভব। এ ছাড়া আল্লাহর গুণ ও বৈশিষ্ট্য তাঁর পবিত্র সত্তার অনুগামী। আল্লাহর পবিত্র সত্তার ধরন সম্পর্কে জানা এবং ধরন নির্ধারণ করা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি তাঁর গুণাবলির প্রকৃত রূপ ও ধরন সম্পর্কে জানাও সৃষ্টির পক্ষে সম্ভব নয়।

ইমাম মালেক (রহ.)-কে যখন ‘দয়াময় আল্লাহ আরশের ওপরে সমুন্নত হয়েছেন’—এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, আল্লাহ তাআলা কিভাবে আরশের ওপর সমুন্নত হয়েছেন? জবাবে তিনি বললেন, ‘আরশের ওপরে আল্লাহর সমুন্নত হওয়া জানা বিষয়। এর পদ্ধতি কেউ অবগত নয়। তার ওপর ঈমান আনয়ন করা ওয়াজিব। তবে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা বিদআত।’ আল্লাহর সব সিফাতের ক্ষেত্রে একই বক্তব্য প্রযোজ্য।

৪. উপমা ও নমুনা বর্ণনা করা : আল্লাহর সিফাতের ক্ষেত্রে এ কথা বলা যে, আল্লাহর সিফাতগুলো মানুষের গুণাবলির মতোই। যেমন—কেউ বলল, আল্লাহর হাত আমাদের হাতের মতোই এবং আল্লাহর শ্রবণ আমাদের শ্রবণের মতোই। আল্লাহ এজাতীয় কথার অনেক ঊর্ধ্বে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তাঁর সদৃশ কোনো কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ১১)

সুতরাং আল্লাহর কোনো গুণের ব্যাপারে বলা যাবে না যে এটা মানুষের অমুক গুণের অনুরূপ।

ব্যাখ্যাহীন বিশ্বাসই ঈমান

কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত, আল্লাহর গুণাবলি ঠিক যেভাবে, যে শব্দ, বাক্য ও অর্থে বর্ণিত হয়েছে, সেভাবেই বিশ্বাস করা আবশ্যক। এটাই ঈমানের দাবি। এতে কোনো পরিবর্তন, সংযোজন-বিয়োজন করা, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সাহায্যে মর্ম পাল্টে দেওয়া এবং সেগুলোকে সৃষ্টির কোনো বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তুলনা ঈমানের দুর্বলতার সাক্ষ্য দেয়। অন্তরের সংশয় ছাড়া কোনো ব্যক্তি এমনটি করতে পারে না।

মনে রাখতে হবে, ইতিবাচক ব্যাখ্যা যা আল্লাহর গুণাবলির অর্থ বুঝতে সাহায্য করে এবং যার মধ্যে শরিয়তের মূলনীতির কোনো সংঘাত নেই, তা দূষণীয় নয়। কেননা এমন ব্যাখ্যা ব্যক্তির ঈমানকে সুদৃঢ় করে। ভাষান্তর আলেমা হাবিবা আক্তার