চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাস করেছে ১ লাখ ২ হাজার ৮৬ জন শিক্ষার্থী। বিপরীতে চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি কলেজে আসন রয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার। সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও ফাঁকা থাকবে ৪৬ হাজার ৯১৪টি আসন।
তবে এসএসসি পাশ করা অধিকাংশের লক্ষ্য নগরীর সেরা কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া। চট্টগ্রামের খ্যাতনামা কলেজ হিসেবে পরিচিত ৮টি কলেজে চলে একপ্রকার মেধাবীদের লড়াই। তবে জিপিএ-৫ পেয়েও অনেক শিক্ষার্থীর মেলে না পছন্দের কলেজ। সংশ্লিষ্টরা জানান, আবেদনের সময় শিক্ষার্থীরা ১০টি কলেজ পছন্দক্রম দেওয়ার সুযোগ পেলেও তারা পছন্দের কলেজগুলোকে বার বার তালিকায় রাখে। ওই কলেজগুলোতে তাদের নম্বর অনুযায়ী আসন মেলে না। এতে একেবারে শেষ ধাপ পর্যন্ত কিছু শিক্ষার্থী ভালো ফল করেও কলেজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক জাহেদুল হক বলেন, একাদশে ভর্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দশটি কলেজে আবেদন করতে হবে। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে বিগত সময়ে অনেকে ৫-৬টি পছন্দের কলেজ তালিকায় দেয়। তাদের ধারণা ৫-৬টি কলেজে আবেদন করলে তাদের নাম চলে আসবে। কিন্তু যেসব কলেজে তারা আবেদন করে, সেসব কলেজে তাদের তুলনায় বেশি নম্বর পাওয়া আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি থাকলে তাদের সুযোগ মিলবে না। ফলে যারা ৫-৬টি কলেজের বেশি পছন্দ দেয়নি, তাদের একটিতেও আসে না। দশটি কলেজে আবেদন করলে এ সমস্যা হবে না। তবে এক্ষেত্রে কম্পিউটার দোকানির ওপর ভরসা করা যাবে না। তালিকার শুরুতে যে কলেজ রাখবে তা নির্ধারণে যাতায়াত, কলেজ পরিবেশসহ অনান্য বিষয় মাথায় রেখে দেওয়া হয়।
জানা যায়, চট্টগ্রামসহ আশেপাশের জেলার বেশির ভাগই শিক্ষার্থী একাদশে ভর্তির সময় পছন্দের তালিকায় প্রথমদিকে রাখে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, সরকারি হাজী মহসিন কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, সরকারি কমার্স কলেজ। এরপরে থাকে বাকলিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজ ও সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। এই ৮ কলেজে মোট আসন রয়েছে ১০ হাজার ১০০টি। তার মধ্যে এসব কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে আসন রয়েছে ৩ হাজার ৫৯০টি, মানবিক বিভাগে রয়েছে ২ হাজার ৭৪০টি ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে ৩ হাজার ৭৭০টি। গত বছর এ কলেজগুলোতে ভর্তির আবেদন করেছে আসন সংখ্যার চারগুণ প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষার্থী।
এছাড়াও রয়েছে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ, হাজরা তজু ডিগ্রি কলেজ, নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যান্টেনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইস্পাহানি পাবলিক কলেজ, হাটহাজারী কলেজ, হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ ও পটিয়া সরকারি কলেজ।
গত তিন বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঘোষিত তিন ধাপে ভর্তি শেষ করতে চাইলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সময় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাও তিন ধাপে ভর্তির আবেদন শেষে কোনো কলেজ বরাদ্দ পান না। কারণ হিসেবে আবেদনের সময় শিক্ষার্থীরা ১০টি কলেজ পছন্দক্রম দেওয়ার সুযোগ পায়। তারা বারবার পছন্দের কলেজগুলো পছন্দের তালিকায় রাখে। ওই কলেজগুলোতে তাদের নম্বর অনুযায়ী আসন মেলে না। এতে একেবারে শেষ ধাপ পর্যন্ত কিছু শিক্ষার্থী ভালো ফল করেও কলেজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। শিক্ষার্থীরা পছন্দের কলেজ না পেয়ে বারবার একই কলেজ পছন্দের তালিকায় রাখে। এতে তারা নির্ধারিত তিন ধাপে কলেজ বঞ্চিত হয়। গত বছর তিন ধাপে ভর্তির আবেদন করেও কলেজ জুটেনি অনেক শিক্ষার্থীর। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীও ছিলেন। প্রথম ধাপে ৮ হাজার ৭০১ শিক্ষার্থী আবেদন করেও তালিকায় কলেজ পায়নি। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পাওয়া ১১ হাজার ৬১২ জনের মধ্যে একাদশে ভর্তির জন্য আবেদন করে ১১ হাজার ৫৭৩ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে প্রথম তালিকায় স্থান পেয়েছে ১১ হাজার ৭২ জন। জিপিএ-৫ পেয়েও প্রথম ধাপে কলেজ পায়নি ৫০১ জন।