ভারতের ১৮ তম লোকসভা নির্বাচনে নজর থাকবে রাজধানী দিল্লির সাতটি লোকসভা কেন্দ্রের দিকে। দিল্লির সাত লোকসভা কেন্দ্রেই ষষ্ঠ দফায় আগামী ২৫ মে ভোট নেওয়া হবে।
দিল্লির সাতটি আসন হলো- চাঁদনী চক, উত্তরপূর্ব দিল্লি, পূর্ব দিল্লি, নিউ দিল্লি, উত্তরপশ্চিম দিল্লি, পশ্চিম দিল্লি এবং দক্ষিণ দিল্লি। এবার প্রতিটি কেন্দ্রেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বিজেপি। তবে এবারের নির্বাচনে মীনাক্ষী লেখি, হর্ষ বর্ধন, পরভেশ সাহিব সিং এবং রমেশ বিধুরি, গৌতম গম্ভীর ও হন্স রাজ হন্স- বিজেপি এই পাঁচ জয়ী সংসদ সদস্যের কাউকেই প্রার্থী করেনি। অন্যদিকে কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টির মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতার কারণে তিনটি আসনে কংগ্রেস এবং চারটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে আপ। এই নির্বাচনেই নির্বাচনী লড়াইয়ে হাতে খড়ি হতে চলেছে সাবেক কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কন্যা বাঁসুরি স্বরাজের। নিউ দিল্লি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাঁসুরি৷ তার প্রধান প্রতিপক্ষ সিনিয়র আম আদমি পার্টি (আপ) নেতা সোমনাথ ভারতী। এই আসন থেকে গত দু’বার বিজয়ী হয়েছিলেন মীনাক্ষী লেখি।
চাঁদনি চক আসনে বিজেপির প্রার্থী করা হয়েছে ‘কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স’ (সিএআইটি) এর সেক্রেটারি প্রবীণ খান্ডেলওয়ালকে। এই কেন্দ্রের থেকে দুবারের বিজয়ী সাবেক কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনকে এবার টিকিট দেওয়া হয়নি। এই কেন্দ্রে খান্ডেলওয়ালের প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের জে. পি আগরওয়াল। গত ২০১৯ সালের নির্বাচনে আগরওয়ালকে ২.২৮ লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করেছিলেন হর্ষ বর্ধন।
একইভাবে পশ্চিম দিল্লি আসন থেকে বিজেপির প্রার্থী করা হয়েছে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র কমলজিৎ সেহরাওয়াতকে। এই কেন্দ্রের বিদায়ী সংসদ সদস্য পরভেশ সাহিব সিং ভার্মা’র স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন কমলজিৎ। এই কেন্দ্রে তার প্রধান প্রতিপক্ষ আপ প্রার্থী মহাবল মিশ্র। ২০১৯ সালের নির্বাচনে এই মহাবাল মিশ্র’কে ৫.৭৮ লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করেছিলেন পরভেশ সাহিব সিং।
দক্ষিণ দিল্লি কেন্দ্রের দুই মেয়াদের সাংসদ রমেশ বিধুরিকে এবার প্রার্থী করেনি দল। তার জায়গায় প্রার্থী করা হয়েছে দিল্লি বিধানসভার বিরোধী দলনেতা রামবীর সিং বিধুরি। এই কেন্দ্রে তার প্রধান প্রতিপক্ষ আপ প্রার্থী শাহি রাম পেহেলওয়ান। গত লোকসভার নির্বাচনে আপ প্রার্থী রাঘব চাড্ডাকে ৩.৬৭ লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করেছিলেন রমেশ বিধুরি।
পূর্ব দিল্লি কেন্দ্রে দুইবারের সাংসদ সাবেক ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীরকে এবার প্রার্থী করেনি বিজেপি। তার জায়গায় প্রার্থী করা হয়েছে পূর্ব দিল্লি মিউনিসিপাল করপোরেশনের সাবেক মেয়র হর্ষ মালহোত্রা’কে। তার প্রধান প্রতিপক্ষ আপ প্রার্থী কুলদীপ কুমার। গত ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৩.৯১ লাখের বেশি ভোটে কংগ্রেস প্রার্থী অরবিন্দার সিংকে লাভলীকে পরাজিত করেছিলেন গৌতম গম্ভীর।
উত্তরপশ্চিম দিল্লি কেন্দ্রে এবার বিজেপি প্রার্থী করেছে উত্তর দিল্লি মিউনিসিপ্যালিটি কর্পোরেশন এর সাবেক মেয়র যোগেন্দ্র চান্ডোলিয়াকে। তার প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের উদিত রাজ। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপির হন্স রাজ হন্স ৫.৫৩ লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করেছিলেন আপ প্রার্থী গুগন সিং রাঙ্গাকে।
তবে একমাত্র উত্তরপূর্ব দিল্লি আসন থেকে দুইবারের জয়ী সংসদ সদস্য মনোজ তিওয়ারিকে ফের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিশিষ্ট ভোজপুরি অভিনেতা ও গায়ক ৫৩ বছর বয়সী মনোজ টানা তৃতীয়বারের জন্য এই কেন্দ্র থেকে লড়ছেন। এই কেন্দ্রে তার প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের কানাইয়া কুমার। ২০১৯ এর নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে ৩.৬৬ লাখের বেশি ভোটে কংগ্রেস নেত্রী শীলা দীক্ষিতকে পরাজিত করেছিলেন মনোজ।
দিল্লির প্রতিটি লোকসভা আসনেই বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ আপ এবং কংগ্রেসের জোট প্রার্থীরা। গত দুইটি লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিতে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার যথেষ্ট কমেছে। আবার দিল্লিতে কখনই লোকসভা আসনে জয়ের মুখ দেখেনি আপ।
কিন্তু এবারে চিত্রটা একটু আলাদা। এই নির্বাচনে প্রধান ইস্যু আবগারি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং উপমুখ্যমন্ত্রী মনিশ শিসোদিয়ার জেলে যাওয়া। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু থেকেই কেজরিওয়ালের গ্রেফতার ইস্যুতে সর গরম করেছে আপসহ বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা। এবারে নিজে নির্বাচনে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে, সংবিধানকে রক্ষা করতে বিরোধী জোটের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আপ প্রার্থীরা।
যদিও কংগ্রেস ও আপের মধ্যে জোট তৈরি ও আসন ভাগাভাগি বিজেপির কাছে যোগ্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে না বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবির। বরং গত নির্বাচনগুলোর চেয়ে এবার তাদের জয়ের ব্যবধান এবং প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার উভয়ই বাড়বে বলে আত্মবিশ্বাসী তারা।
২০১৪ সালের পর ২০১৯ সালের নির্বাচনেও দিল্লির সাতটি লোকসভা কেন্দ্রে জয় পেয়েছিল বিজেপির প্রার্থীরা। ২০১৪ সালের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৩৫ শতাংশ, ২০১৯ সালে রেকর্ড ভোট পেয়েছিল তারা, প্রায় ৫৭ শতাংশ। মোদি-অমিত শাহের দল বিজেপির প্রত্যাশা চলমান লোকসভা নির্বাচনেও সাতটি আসনেই জয় পাবে তারা।
দিল্লীর সাত লোকসভা কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ১.৫ কোটি। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮১.৬ লাখ, নারী ভোটার ৬৯.৪ লাখ, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ১,২১৫ জন। গোটা দিল্লী শহর জুড়ে প্রায় ১৩ হাজার ভোট গ্রহণ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। গণনা আগামী ৪ জুন।
এই নির্বাচনে দিল্লির সবচেয়ে বিত্তবান প্রার্থী হলেন উত্তর-পূর্ব দিল্লি কেন্দ্রে বিজেপির মনোজ তিওয়ারি। ৫৩ বছর বয়সী মনোজের সম্পত্তির পরিমাণ ২৮.০৫ কোটি রুপি। নির্বাচনী হলফনামায় এই তথ্য সামনে এসেছে। দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ দিল্লি কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ৭১ বছর বয়সী রামবীর সিং বিদুরীর সম্পত্তির পরিমাণ ২১.০৮ কোটি রুপি। তৃতীয় স্থানে পশ্চিম দিল্লি কেন্দ্রে আপ প্রার্থী মহাবল মিশ্র’র সম্পত্তির পরিমাণ ১৯.৯৩ কোটি রুপি। চতুর্থ স্থানে রয়েছেন নিউ দিল্লি কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কন্যা বাঁশুরী স্বরাজ, তার সম্পত্তির পরিমাণ ১৯ কোটি। বিত্তবান প্রার্থীর তালিকায় পঞ্চম থানে থাকা নিউ দিল্লি কেন্দ্রে বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থী রাজ কুমার আনন্দের সম্পত্তির পরিমাণ ১৭.৮৭ কোটি রুপি। এছাড়াও চাঁদনী চক কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী প্রবীণ খান্ডেলওয়ালের সম্পত্তির পরিমাণ ৬.৬২ কোটি রুপি, উত্তরপূর্ব দিল্লি কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী কানাইয়া কুমারের সম্পত্তির পরিমাণ ১০.৬৫ লাখ রুপি।