ঘূর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবে চট্টগ্রামের বেশিরভাগ উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গত রবিবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুর পর্যন্ত রিমেলের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়বৃষ্টি ও গাছপালা ভেঙ্গে চট্টগ্রামের প্রায় সব উপজেলা এবং নগরের বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে লাখ লাখ বাসিন্দা। পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগর ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। পাশাপাশি কৃষি ও মৎস খাতেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকরা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, রিমেলের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো বাতাসে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছ উপড়ে পড়ে তার ছিড়ে গেছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী, বাঁশখালীসহ নগরীর বেশিরভাগ উপজেলাই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু এলাকায় সরবরাহ লাইন ঠিক থাকলেও লোডশেডিং চরমে পৌঁছেছে। দিনভর বিদ্যুতের আসা যাওয়ায় বিরক্তির উদ্রেক ঘটছে গ্রাহকদের।ঝড়ের কারণে ৮ উপজেলায় এখনো পর্যন্ত ৭১টি খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। হেলে পড়েছে অন্তত ৯৫টি খুঁটি। এছাড়াও অন্তত ৩৪৯ জায়গায় তার ছিড়ে গেছে। ২৫টি ট্রান্সফরমার ও ৩৩০টি বৈদ্যুতিক মিটার নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও নগর ও উপজেলার বেশ কিছু এলাকার সাবস্টেশনগুলোতে পানি ঢুকে গেছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সভাপতি চৌধুরী হাছান মাহমুদ আকবরী জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করতে বিদ্যুৎ বিভাগের কারিগরি দলগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। একারণে কিছুটা বাড়তি সময় লাগছে।
রিমেলের প্রভাবে পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টির পানিতে বিভিন্ন উপজেলায় বেশকিছু বোরা ধানের জমি পানির নিচে তলিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কৃষি বিভাগ থেকে এর নির্দিষ্ট হিসেব পাওয়া যায়নি। এছাড়াও অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে বিভিন্ন উপজেলায় পুকুরসহ মাছ চাষের প্রকল্পেগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রত্যন্ত উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বেশকিছু কাঁচাপাকা সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হলেও সেগুলোর ক্ষয়ক্ষতির হিসেব এখনো করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি কি পরিমাণ বিধ্বস্ত হয়েছে সেটা খতিয়ে দেখছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনগুলো।
এদিকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তসলিম আহমেদ জানিয়েছেন, রিমেলের প্রভাব কিছুটা কমার পর বিমানবন্দরের ফ্লাইট ওঠানামা চালু করা হলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সোমবার রাত পর্যন্ত অন্তত নয়টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
এছড়াও বৈরি আবহাওয়ায় চট্টগ্রামের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুল মঙ্গলবারও বন্ধ ছিল। চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আবদুর রহমান জানান, উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলার শিক্ষা অফিসারদের স্থানীয় পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। তবে দুর্যোগ বিবেচনায় শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।