টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা। কয়েকদিন ধরে উপজেলার ৭০ ভাগের বেশি এলাকা ছিল জলমগ্ন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট।

২০২২ সালে  সিলেটে ভয়াবহ বন্যার তাণ্ডব গোটা বিশ্বে আলোড়ন জাগিয়েছিল। এবারের বন্যার লক্ষণ তার চেয়েও ভয়াবহ বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গতবারের চেয়ে এবার পানি বৃদ্ধির হার ছিল দেড় থেকে দুই ফুট বেশি। তলিয়ে গেছে উপজেলার ২১৪টি গ্রামের কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট। পাহাড়ি ঢলের তোড়ে প্লাবিত অঞ্চলের প্রায় ৩০১২ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়েছে। দুর্ভোগ বেড়েছে উপজেলাবাসীর।ফসলহানি, ঘরবাড়ি নষ্ট হওয়া, জানমালের পর যোগাযোগ ব্যবস্থার এই সামলাতে এখন হিমশিম খাচ্ছে গোয়াইনঘাটের মানুষ। কোথাও পাকা রাস্তা দেবে গেছে, রাস্তা থেকে পিচ উঠে গেছে। আবার অনেক জায়গায় সড়কের অর্ধেকই ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া খানাখন্দ তৈরি হয়ে বিভিন্ন সড়ক চলাচলের হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা সে সব সড়কে অস্থায়ীভাবে বাঁশ, কাঠ ও বালুর বস্তা দিয়ে কোনো রকমে যাতায়াত করছেন। তবে যেসব সড়কে যান চলাচল করতে পারছে না, সেগুলো আগে মেরামতের দাবি তাদের। কেননা এতে ব্যবসা- বাণিজ্যসহ দৈনন্দিন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গোয়াইনঘাটের ১৩টি ইউনিয়নের কাঁচা- পাকা মিলিয়ে প্রায় ৩০১২ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে কাঁচা ২২৪ কিলোমিটার ও পাকা রাস্তা প্রায় ৮৮ কিলোমিটার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব জাফলং, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং ও গোয়াইনঘাট সদর ইউনিয়নের রাস্তাঘাট। সব মিলিয়ে প্রায় শতকোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

জাফলংয়ের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন লনি জানান, এ ইউনিয়ন থেকে উপজেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথ পিরিজপুর-সোনারহাট সড়কের উনাই ব্রিজ থেকে আলীরগ্রাম পর্যন্ত দুই কিলোমিটার পাকা রাস্তা ভেঙে চুরমার। পাহাড়ি ঢল আর বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছে এখানকার সব কয়টি রাস্তা। যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, এ রাস্তা ধরে এখন হেঁটে চলাও দায়। এই দুই কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরে যাওয়ার জন্য নৌকাই এখন একমাত্র ভরসা। নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা সৈয়দ হেলাল আহমদ বাদশা জানান, সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের সালুটিকর বাজার এলাকার ব্রিজের পর এক কিলোমিটার সড়ক পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে গেছে। 

তোয়াকুল ইউনিয়নের সাকের পেকেরখালে আগের ভাঙা সড়কটি আবার নতুন করে ভাঙনের মুখে পড়ে বিধ্বস্ত। এছাড়া রুস্তমপুর ইউনিয়নের যৎনাথা গ্রামের সামনের ব্রিজের কাজ চলমান থাকায় বিকল্প সড়ক করা হয়েছিল। সেই সড়কও ভেঙে গেছে ঢলের তোড়ে। এর একাংশ ভেসে গেছে স্রোতে। এতে উল্টো রাস্তা ধরে ১৬ কিলোমিটার অতিরিক্ত সড়ক ঘুরে ফতেহপুর ও ডৌবাড়ি হয়ে প্রয়োজনীয় কাজে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরে যেতে হচ্ছে। মানুষের খরচ আর ভোগান্তি দুটোই বেড়েছে সমানতালে। মধ্য জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন শিকদার জানান, পাহাড়ি ঢলে তার ইউনিয়নের ৩৫টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে বাউরবাগ হাওর বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। 

উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পূর্ব, পশ্চিম ও মধ্য জাফলং এবং গোয়াইনঘাট সদর ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের বেশি ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে উপজেলার ৮০ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পাকা সড়ক আর দেড় থেকে দুইশ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে কালভার্ট-সেতু ভেঙে গেছে। এবার এমন ভয়াবহ বন্যা হবে, তা কেউ আঁচ করতে পারেনি। ‘২২ সালের চেয়েও ভয়াবহ এবারের বন্যা।

ইউএনও তৌহিদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী এবং পিআইওকে অনতিবিলম্বে নদী ও খালের পার্শ্ববর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্থানের বাঁধ, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট ও ব্রিজ মেরামত ও সংস্কার করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের তালিকা ও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে ভেঙে যাওয়া সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো সংস্কার করা হবে।