তারল্য সংকট মোকাবিলায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো একদিনে রেকর্ড পরিমাণ ধার নিয়েছে। যার পরিমাণ ৩২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা ও কলমানি মার্কেট এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ধার করেছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। 

বড় ধরনের কয়েকটি বৈদেশিক দায় শোধ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কেনা ও রোজা এবং ঈদের বাড়তি চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার চাহিদা বাড়ায় তারল্যের চাপ কিছুটা বেড়েছে। এই চাপ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধারের মাত্রা বাড়াতে হয়েছে। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একদিনে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার কোটি টাকা ধার নেওয়ার নজির রয়েছে। 

সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে আমানত বাড়ার চেয়ে ঋণ বাড়ছে বেশি। এছাড়া ডলার সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদ টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হচ্ছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলার ধার দিয়ে এর বিপরীতে নেওয়া টাকা এখন ফেরত দিতে হচ্ছে। রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার ধার করছে। এসব ডলার নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিচ্ছে। আবার নির্ধারিত সময় পর ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেরত দিচ্ছে। ফলে যখন ডলার ফেরত দিচ্ছে তখন টাকাও ফেরত দিয়ে দিতে হচ্ছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্যের চাপ বেড়েছে। এছাড়া রোজা ও ঈদের কারণেও ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে। 

বুধবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ধার করেছে ২৮ হাজার ৮৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যা একদিনে সর্বোচ্চ ধার হিসাবে চিহ্নিত। এর আগে গত বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একদিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার কোটি টাকা ধার নেয়। এছাড়া এর মধ্যেই ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা ধার নিচ্ছে। তবে ১২ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ধার প্রায়ই নিচ্ছে। এসব ধারের একটি বড় অংশ একদিনের জন্য নেওয়া হয়। বাকি অংশ ৭ দিন বা ১৫ দিন মেয়াদে নেওয়া হয়। ধার নেওয়ার নির্ধারিত সময়ের পর ব্যাংকগুলো টাকা ফেরত দিতে গিয়ে আবার তারল্য সংকটে পড়ে। তখন আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিচ্ছে। এভাবে ব্যাংকগুলো এখন দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড়াও এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকেও ধার করছে। এর মধ্যে কলমানি, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ধার রয়েছে। বুধবার ব্যাংকগুলো কলমানি, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ধার মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। ওই দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক মিলিয়ে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। সোমবার নিয়েছে ১৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, রোববার নিয়েছে ১১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। 

গত সপ্তাহের শেষ ৩ দিনে গড়ে ব্যাংকগুলো ১৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। বেশিরভাগ ব্যাংক এই ধারের টাকায় গ্রাহক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণ করছে। এছাড়া কলমানি মার্কেট থেকেও ধার করেছে। ওই সপ্তাহের শেষ ৩ দিনে ব্যাংকগুলো প্রায় ৬৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা ধার করেছে। 

এদিকে বৃহস্পতিবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেট থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। এর বাইরে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ধার করেছে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ খাত থেকে ধার নিয়েছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।