স্বয়ং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল জেলে। মদকাণ্ডেই দেড় বছর ধরে কারাগারে বন্দি উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া। দুর্নীতির অভিযোগে বছর তিন জেলে আটক দিল্লির প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন। এছাড়া আপের একাধিক নেতা-মন্ত্রী ইডি-সিবিআইয়ের র‍্যাডারে রয়েছেন বলে খবর। মদকাণ্ডে প্রকাশ্যেই গ্রেফতারের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী আতিশী।

দল ও সরকারের এমন বিপদের দিনে দেখা নেই আম আদমি পার্টির রাজ্যসভায় দশ সাংসদের সাতজনের। কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারের পর পথে নেমেছে গোটা আপ পরিবার। দিল্লি ছাড়াও দেশের একাধিক শহরে প্রতিবাদ মিছিল, সমাবেশ হয়েছে। দু সপ্তাহ আগে দিল্লির রামলীলা ময়দানের প্রতিবাদ সভায় হাজির ছিল ইন্ডিয়া জোটের সব শরিক। কিন্তু আপেরই সাত সাংসদকে দলের প্রতিবাদের কর্মসূচিগুলিতে দেখা যাচ্ছে না। লোকসভায় আপের একজন এমপি ছিলেন। তিনি গতমাসে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। 

রাজ্যসভার দশ সাংসদের মধ্যে মদকাণ্ডে প্রায় ছয়মাস জেলে ছিলেন দলের শীর্ষ নেতাদের একজন সঞ্জয় সিং। তিনি সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে দলের প্রতিবাদ কর্মসূচির হাল ধরেছেন। তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছেন আরও দুই সাংসদ যাঁরা আবার রাজনীতির জগতের মানুষ নন। যদিও দলের সব কর্মসূচিতে তাঁদের দেখা যাচ্ছে। অথচ বাকি সাতজন নীরব। 

বেপাত্তা সাতজনের মধ্যে একমাত্র প্রাক্তন ক্রিকেটার হরভজন সিং স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি দলের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হবেন না। সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের এই অবস্থানের কথা জানালেও ব্যাখ্যা দেননি হরভজন। বোঝাই যাচ্ছে তিনি বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির সঙ্গে বিবাদে জড়াতে চাইছেন না এবং পদত্যাগী মন্ত্রী রাজকুমার আনন্দের মতো জাতীয় ক্রিকেট দলের এই প্রাক্তন তারকা  মনে করেন কেজরিওয়াল-সহ দলের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ওঠা দুনীতির অভিযোগ সত্য। বুধবার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের পাশাপাশি আপের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন মাঝবয়সি রাজকুমার। এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পাশাপাশি বলেন, দিল্লি হাই কোর্ট বলে দিয়েছে কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারে অন্যায় কিছু হয়নি। ইডির কাছে আপ কর্তার দুর্নীতির প্রচুর তথ্যপ্রমাণ আছে। 

বেপাত্তা সাংসদদের নিয়ে দলে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন সঞ্জয় সিং। তাঁর বক্তব্য, সাত সাংসদ কেন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হচ্ছেন না সে ব্যাপারে দলকে তাঁরা কিছু জানাননি। বেপাত্তা সাংসদের অন্যতম হলেন রাঘব চাড্ডা ও স্বাতী মালিওয়াল। রাঘব পাঞ্জাব এবং স্বাতী দিল্লি থেকে রাজ্যসভার সদস্য হয়েছেন। রাঘব চোখের অপারেশন করাতে লন্ডন গিয়েছেন। কেজরিওয়াল গ্রেফতার হওয়ার আগে লন্ডন গেলেও এখনও সেখানেই রয়েছেন। যদিও তাঁর অভিনেত্রী স্ত্রী ফিরে এসেছেন। রাঘবের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়ে গিয়েছেন রাঘব। 

স্বাতী মালিওয়াল রাজ্যসভার সদস্য হওয়ার আগে ছিলেন দিল্লির মহিলা কমিশনের চেয়ারপারসন। কেজরিওয়াল গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি দেশ ছেড়েছেন। স্বাতীর বক্তব্য তিনি নিউইয়র্কে বোনের বাড়িতে আছেন। বোন অসুস্থ। তাঁর শুশ্রূষার জন্য থেকে যেতে হয়েছে। 

আপ সূত্রের খবর, রাজ্যসভার সাত সাংসদের গতিবিধির দিকে পার্টি নজর রাখছে। বিজেপি দল ভাঙিয়ে দিল্লিতে ক্ষমতা দখল করতে চাইছে বলে কেজরিওয়াল জেলে যাওয়ার আগে থেকে অভিযোগ করেছেন, বিজেপি আপকে ভাঙতে চাইছে। কেজরিওয়ালের মন্ত্রী আতিশী সাংবাদিক বৈঠক ডেকে অভিযোগ করেছেন, ইডির থাবা থেকে বাঁচতে তাঁকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রমাণ দিতে আতিশীকে আইনের নোটিস ধরিয়েছে বিজেপি। কিন্তু বেপাত্তা সাংসদের সঙ্গে বিজেপির কোনও বোঝাপ়ড়া হয়েছে কিনা তা নিয়ে আপের অন্দরে জল্পনা তুঙ্গে।