চার ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিনেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপি। দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও দলটির অবস্থান কী হবেÑ এ বিষয়ে এখনো অস্পষ্টতা রয়েছে। জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমাদের সময়কে বলেন, ‘যেহেতু দল নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি, সেহেতু পূর্বের সিদ্ধান্তই এখনো বলবৎ আছে।’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও পরবর্তী সময়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিল। এ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা নির্বাচনে অংশ করেছিল, তাদের দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^রচন্দ্র রায় বলেন, ‘যদি কেউ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তা হলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ইস্যুতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত। একাংশের মত হচ্ছে, যেহেতু এখন কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম নেই, সে কারণে নেতাকর্মীদের সক্রিয় এবং ঐক্যবদ্ধ রাখতে কৌশলে হলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। তা ছাড়া নেতাকর্মীদের একটি অংশকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখাও কঠিন হবে।

অপরাংশের নেতাদের মত হচ্ছে- ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা মানে, এই সরকারকে বৈধতা দেওয়া। একই সঙ্গে গত ৭ জানুয়ারি বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও চায় বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। সরকারের এ ফাঁদে কোনো অবস্থায় পা দেওয়া ঠিক হবে না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, ঈদের আগে উপজেলা নির্বাচন ইস্যুতে দলের অবস্থান বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্থায়ী কমিটির বৈঠক না হওয়ায় এ ইস্যুতে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কোনো কোনো নেতা মনে করেন, নীতিনির্ধারণী ফোরাম বিভক্ত থাকায় কৌশলগত কারণেই ঈদের আগে স্থায়ী কমিটির বৈঠক আহ্বান করা হয়নি। এ বিষয়ে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। যদি দলের কেউ অংশগ্রহণ করে, তা হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চার ধাপে ৪৮১টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ মে। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ ছিল গতকাল সোমবার।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপে বিএনপি নেতাদের মধ্যে কতজন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে, তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে তাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কিনা, সে সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি দায়িত্বপ্রাপ্তদের।

নির্বাচনে জামায়াত

বিএনপির অস্পষ্টতা থাকলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ ইস্যুতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বেশ আগে তাদের সিদ্ধান্ত দলটির তৃণমূলকে জানিয়ে দিয়েছে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। সম্প্রতি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, ‘এটি স্থানীয় দায়িত্বশীলরা দেখবেন।’ জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, যাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে, শুধু তাদেরকেই প্রার্থী করা হচ্ছে।