বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি তুলেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সভা থেকে এ দাবি তোলা হয়।

জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতি অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির নেতা শহিদুল ইসলাম সবুজ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী প্রমুখ।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সভায় নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, ধাপে ধাপে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, মুক্তবাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নীতিগত পরিবর্তন ছাড়া দাম বাড়ানো ঠেকানো যাবে না, জনগণকেও স্বস্তি দেওয়াও যাবে না। সরকার দামবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে প্রচারমূলক কিছু পদক্ষেপ নিলেও মুক্তবাজারের ধারা অব্যাহত রাখায় ও ‌সিন্ডিকেট তোষণ নীতির কারণে তা বাস্তবায়ন বাস্তবায়ন হবে না।

দেশে উৎপাদিত ফসলের ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে সব কৃষি উপকরণের দাম কমানো, প্রকৃত কৃষকদের কাছে তা সরাসরি সরবরাহ করা এবং উৎপাদক সমবায় ও ক্রেতা সমবায় গড়ে তোলার আহ্বান জানান নেতারা।

আমদানি করা পণ্য কয়েকজন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি উল্লেখ করে তারা বলেন, এদের হাত থেকে মুক্ত না হয়ে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এজন্য নিত্যপণ্য দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্তভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আমদানি ও সুনির্দিষ্ট দামে বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থা এবং সারাদেশে ন্যায্য মূল্যের দোকান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

নেতারা পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা ও খেলাপি ঋণ আদায়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চলমান দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন করা ছাড়া এ লুটেরাদের পরাস্ত করা যাবে না। এজন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের দাবিতে লড়াই সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে নীতিনিষ্ঠ বাম গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।

দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, আমরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছিলাম সরকার যে নীতিতে এ খাত পরিচালনা করতে চাইছে, তাতে সংকটের সমাধান হবে না বরং এক পর্যায়ে বিপর্যয় নেমে আসবে। সরকারের নীতির কারণে এ খাত শুধু দেশের অর্থনীতিতে বোঝা বাড়াচ্ছে। এখন আগামী তিন বছর নিয়মিত দাম বাড়িয়ে জনগণের কাঁধে আরও দায় চাপানোর প্রচেষ্টা চলছে। এর বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে।  

সভায় বলা হয়, স্থল ও সমুদ্রভাগের গ্যাস যথাযথভাবে অনুসন্ধান ও উত্তোলনে যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে জ্বালানি খাতকে আমদানিনির্ভর খাতে পরিণত করা হয়েছে। এসব সম্পদের ওপর দেশের জনগণের শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে স্বচ্ছতার সঙ্গে বিদেশি কন্ট্রাক্টর নিয়োগ করে গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানের কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে আইনি ফাঁক-ফোকর দিয়ে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে সম্পাদিত অসম কোনো চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো এবং এর ফলে কৃষি শিল্প উৎপাদনের যে সংকট তৈরি হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখতে সচেতন দেশবাসীর প্রতি সভায় আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া সভায় জেলা সফরসহ সাংগঠনিক বেশ কয়েকটি কর্মসূচি নেওয়া হয়।