মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে সৌদি ফেরত শিল্পী বেগমকে (২৩) গৃহবধূকে গলাকেটে হত্যা করেছেন আপন স্বামী। হত্যার পর রক্তাক্ত দা নিয়ে থানায় হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন সফর আলী নামের ওই স্বামী। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামী সফর আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সদর কমলগঞ্জ ইউনিয়নের বাঘমারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিল্পী ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। পরকীয়ার লিপ্ত থাকার সন্দেহে এক সন্তানের জননী শিল্পীকে হত্যা করেন স্বামী সফর। এর আগে শনিবার সৌদিআরব থেকে দেশে ফিরে রোববার সকালে বাড়ি উঠেন শিল্পী বেগম। স্থানীয়রা জানায়, কমলগঞ্জের বাঘমারা গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার ছেলে সফর আলী পেশায় রং মিস্ত্রি। কাজ করেন নারায়ণগঞ্জ শহরে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রেম করে বিয়ে করেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া রোডের মুক্তার মিয়ার মেয়ে শিল্পী বেগমকে।

বিজ্ঞাপনতাদের সংসারে সোহাগ নামের পাঁচ বছরের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। গত পাঁচ মাস ধরে স্ত্রী শিল্পীর সাথে নানান বিষশে বনিবনা হচ্ছিলো না স্বামী সফর আলীর। এমতাবস্থায় গত রোজার ৪ দিন আগে হেলাল নামের শ্রীমঙ্গলের এক দালালের মারফত এজেন্সির মাধ্যমে স্বামীর অনুমতি ছাড়াই সৌদি আরব যায় শিল্পী। দালাল হেলাল সম্পর্কে শিল্পীর চাচা হন। বিষয়টি জানার পর স্ত্রীকে দেশে ফিরে আনতে ওই দালালকে চাপও দিচ্ছিলেন সফর আলী । স্বামীর চাপে দালাল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিটের টাকা পরিশোধ করে শিল্পী আক্তারকে দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন। শনিবার দেশে এসে রোববার সকালে স্বামীর বাড়িতে উঠেন শিল্পী। স্বামী সফর আলী জানতে পারেন তাঁর স্ত্রী ৩ মাসের গর্ভবতী। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয় শোনার পর এ নিয়ে প¦ার্শবর্তী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সোলেমান হোসেন এর কাছে অভিযোগ নিয়ে গেলে তিনি সফর আলীর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন এর কাছে গিয়ে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, পরে বসে বিষয়টি দেখে দিবেন। কিন্তু স্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল মতিনের কাছে যাননি সফর আলী। এমন কথা জানিয়ে সফর আলীর মা সরুফা বেগম বলেন, পথে অন্য এক সালিশ বিচারকের কাছে গেলে ওই সালিশ বিচারক সফর আলীকে বলেন, বৌ কথা না হুনলে যাহ জব (জবাই) করিলা। তারপর বাড়ি এসেই পুত্রবধূকে মারধর করে ছেলে। তবে ওই সালিশ বিচারকের নাম বলেননি সফরের মা সরুফা বেগম। মারধরের এক পর্যায়ে দা দিয়ে শিল্পীকে গলা কেটে হত্যা করে সফর আলী। পরে রক্তাক্ত দা নিয়ে থানায় হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করে সে। থানায় পুলিশকে স্ত্রী হত্যার লোমহর্ষক ঘটনা জানিয়ে বলেন, দালাল হেলালের সাথে অবৈধ সম্পর্কে তার স্ত্রী গর্ভবতী হয়েছে। তাই তাকে মেরে ফেলেছি। পরে কমলগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল আলম ও ওসি তদন্ত আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) আনিছুর রহমান ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শী এক মহিলা জানান, নিহত শিল্পীর গোপনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গলাকেটে হত্যার আগে তাকে পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়েছে। নিহত শিল্পীর ছোট বোন স্বপ্না বেগম বলেন, সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে আপা ফোনে নির্যাতনের কথা জানায়। এরপরই খবর মিলে তাকে খুন করা হয়েছে। আলাপকালে সহকারী পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান বলেন, আসামি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ঘটনা তদন্তের জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কমলগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল আলম বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার মর্গে পাঠানো হয়েছে। গৃহবধূ শিল্পীকে গলাকেটে হত্যা করা হলেও তার শরীরে আঘাত রয়েছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাতক সফর আলীর বাবা কদ্দুস মিয়া ও মা সরুফা বেগমকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।