আমাদের শরীরের বাহ্যিক দিকটি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলে আরও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে আমাদের পোশাক। আল কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘হে আদমসন্তানগণ! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি এবং তাকওয়ার পোশাকই সবচেয়ে উৎকৃষ্ট।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ২৬) পোশাক পরিধান, লজ্জাস্থান আবৃত করা ও সাজসজ্জার আসল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহভীতি। পোশাকে যেন কখনো অহংকার বা গর্বের ভঙ্গি না থাকে। অপব্যয় না থাকে। মহিলাদের জন্য পুরুষের পোশাক, পুরুষের জন্য মহিলাদের মতো পোশাক না হওয়াই চাই। আল্লাহ আরও বলেন, ‘এবং তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের, যা তোমাদের তাপ থেকে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য বর্মের যা তোমাদের যুদ্ধে রক্ষা করে।’ (সুরা নাহল, আয়াত ৮১)  ‘হে বনি আদম! প্রতি সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পোশাক পরিধান কর।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ৩১) হজরত হাসান (রা.) বলতেন, ‘আল্লাহ সৌন্দর্য পছন্দ করতেন তাই আমি প্রতিপালকের সামনে সুন্দর পোশাক পরে হাজির হই।’ রসুল (সা.) বলেন, ‘পুরুষের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং মহিলাদের মুখমণ্ডল, হাতের তালু ও পা দুটি ছাড়া (টাখনুর নিচে) পুরো শরীর ঢাকার নামই হলো লজ্জাস্থান ঢাকার বিধান। এটি ছাড়া সালাতই হয় না।’ রসুল (সা.) আরও বলেন, ‘তোমাদের পোশাকের মধ্যে সাদা পোশাক পরিধান কর। কেননা পোশাকের মধ্যে তা-ই উত্তম পোশাক। আর এতে তোমাদের মৃতদের কাফন দাও।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)  কোরআনে মেয়েদের পোশাকের ক্ষেত্রেও আয়াত নাজিল হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণ, কন্যাগণ ও মোমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের বুকের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে, ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না।’ (সুরা আহজাব, আয়াত ৫৯) ইমাম ইবনে জারির তাবারি বলেন, ‘ভদ্রঘরের মেয়েরা যেন নিজেদের পোশাক-আশাকে বাঁদিদের মতো সেজেগুজে ঘর থেকে বের না হয়। তাদের চেহারা ও কেশদাম যেন খোলা না থাকে। বরং তাদের নিজেদের ওপর চাদরের একটি অংশ লটকে দেওয়া উচিত। ফলে কোনো ফাসেক তাদের উত্ত্যক্ত করার দুঃসাহস করবে না।’ (জামেউল বায়ান) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ কেয়ামতের দিন ওই ব্যক্তির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেবেন না, যে ব্যক্তি অহংকারবশত ইজার (পরিধেয়) টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরে।’ (বুখারি) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যেসব পুরুষ মহিলাদের মতো ও মহিলারা পুরুষের মতো পোশাক পরে রসুল তাদের অভিশাপ দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ, আবু সুনান) পোশাক বা সাজসজ্জার ক্ষেত্রে আল্লাহ নারীদের জন্য স্বর্ণ ও রেশম হালাল করেছেন কিন্তু পুরুষের জন্য তা করেছেন হারাম। এবং নিষেধ করেছেন নারীরা যেন তা পরিধান করে নিজেকে প্রদর্শন বা অন্যকে আকৃষ্ট না করে। আল্লাহ বলে দিয়েছেন তোমরা যত খুশি সাজো কিন্তু স্বামী, পিতা, ভাই ছাড়া অন্য কোনো মাহরাম পুরুষের সামনে তা প্রদর্শন কোরো না।

আমাদের মনে রাখতে হবে, পোশাক মানবদেহকে সর্বক্ষণ আবৃত করে রাখে এবং তার মানসিক অনুভূতিগুলো নিয়ন্ত্রিত ও পরিশীলিত করে। এজন্য রসুল (সা.) বারবার বিনয় ও সরলতা প্রকাশ পায় সে ধরনের পোশাক পরিধানের নির্দেশ দিয়েছেন। আজকাল অনেকে হাঁটু খোলা প্যান্ট পরে নিজেকে সুন্দর ও স্মার্ট ভাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে রসুল (সা.) হাঁটু অনাবৃত রাখতে যেভাবে নিষেধ করেছেন তেমনি টাখনুও আবৃত করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে কোরআন-হাদিসের আলোকে পোশাক পরিধান করে জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন।লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার