আধিপত্য বিস্তার, অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণসহ অন্তত ১০টি কারণে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একের পর এক খুন হচ্ছে। যদিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দাবি- ক্যাম্পে অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে খুনে যুক্ত অপরাধীদের। 

আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-৮ অধিনায়ক আমির জাফর বলেন, ‘সম্প্রতি খুনের ঘটনাগুলোর বেশির ভাগই আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। মূলত তারা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার করতেই খুনগুলো করছে। এরই মধ্যে আমরা অভিযান জোরদার করেছি। বেশ কিছু সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছি। অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।’আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-১৪ অধিনায়ক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তার, দ্বন্দ্বসহ নানান কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনের ঘটনা ঘটছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান চলছে।
আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।’ 

কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি বছরের ১৫ মে পর্যন্ত কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে খুন হয়েছেন ১৭ জন। তার আগের বছর ২০২৩ সালে খুন হন ৭৪ জন। ২০২১ ও ২০২২ সালে করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে পুরো দেশের অপরাধ নিম্নমুখী থাকলেও বিপরীত চিত্র ছিল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। তখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩৩টি খুনের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আসামি করা হয় ৩০২ জন রোহিঙ্গাকে। 

২০২০ সালে ১৩টি হত্যা মামলায় আসামি করা হয় ১২৩ রোহিঙ্গাকে। ২০১৯ সালে ২২ হত্যা মামলায় আসামি করা হয় ১০৭ জনকে। ২০১৮ সালে ১৫ হত্যা মামলায় আসামি করা হয় ৩৩ জনকে। ২০১৭ সালে ৮টি হত্যা মামলায় আসামি করা হয় ২২ রোহিঙ্গাকে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত সাড়ে সাত বছরে দুই শতাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খুনের শিকার হয়েছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সক্রিয় নেতা, ক্যাম্পের মাঝি ও সাব মাঝি, ধর্মীয় নেতা, স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ রোহিঙ্গা। 

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনোখুনি নেপথ্যে কমপক্ষে ১০ কারণ চিহ্নিত করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। যার মধ্যে রয়েছে- মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ, অস্ত্র ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ, আরসা ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) বিরোধ, চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ, হত্যার বদলায় হত্যা, সক্রিয় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর দ্বন্দ্ব, ক্যাম্পের মধ্যে থাকা দোকানকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব, টাগের্ট কিলিং, অপহরণ এবং তর্কাতর্কিকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনাগুলো ঘটছে।  

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনোখুনির নেপথ্যে থাকা কমপক্ষে ৭৫টি সন্ত্রাসী সংগঠনকে চিহ্নিত করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এদের মধ্যে রয়েছে আরসা, আরএসও, ইসলামী মাহাজ, জমিউয়তুল মুজাহিদ্বী, নবী হোসেন গ্রুপ, মুন্না গ্রুপ, ডাকাত হাকিম গ্রুপ, ডাকাত সালেহ, মাস্টার মুন্না, সালমান শাহ গ্রুপ, মৌলভী তৈয়ুব, কালা পুতু, আবু কালাম ওরফে জাবু জাকু, মো. ইসলাম, মাস্টার মো. আয়ুব, মহিব উল্লাহ, কাইনুস, মোস্তাক আহমেদ, মো. ইসলাম, মো. জামাল হোসেন, শাহ নেওয়াজ, জয়নাল হোসেন, আবদুল আমিন ওরফে কালু ডাকাত, রুবেল, রুয়াইয়া ওরফে রবি, জামাল হোসেন, মো. দেলোয়ার, মো. হামিদ, করিম উল্লাহ, মো. ওসমান, ছোট সৈয়দ নুর, জিয়াবুর রহমান ওরফে জাবু, সলিম, ইলিয়াছ, আবুল হাফেজ, কালাইচ্ছা, মো. আয়াজ, আবদুল আমিন, মো. তৈয়ুব, মো. আলম ওরফে নালা, মো. কামাল হোসেন, মো. সাদ্দাম, দিদার আহমেদ ওরফে নাইগ্যা, মো. এমরান হোসেন, জাফর আলম ওরফে ভুলু ডাকাত, খোকন, ইব্রাহীম, মো. নুর, মো. রফিক, আবদুর রজব, রিদুয়ান, শালবাগান ওসমান গণি ওরফে আয়াছ, নুর হোসেন ওরফে মুনিয়া, করিম উল্লাহ, মোবারক হোসেন, মো. সাইফুল, ইয়াসিন, মো. আলম, হারুন ডাকাত, মো. সাদেক, আবদুর রহমান, মো. ইসমাইল, মো. ইসহাক, মো. হারুন ও ইমাম হোসেন গ্রুপ অন্যতম।