দ্বিন আরবি শব্দ। পবিত্র কোরআনে দ্বিন শব্দ দ্বারা মুসলমানদের পালনীয় পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থাকে বোঝানো হয়। শব্দটি পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে; যেমন—

১. কর্মফল, প্রতিদান, বিচার : ইরশাদ হয়েছে, ‘কর্মফল দিবসের মালিক।’(সুরা : ফাতিহা, আয়াত : ৪)

আয়াতে দ্বিন শব্দের এ অর্থই বোঝানো হয়েছে।

২. আনুগত্য বা আত্মসমর্পণ : ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি আল্লাহর দ্বিনের (আনুগত্যের) পরিবর্তে অন্য কিছু তালাশ করছে? অথচ আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সেগুলো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তাঁরই আনুগত্য করে এবং তাদের তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তন করানো হবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৮৩)

এখানে দ্বিন আত্মসমর্পণ বা আনুগত্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

৩. জীবনব্যবস্থা : ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর ইসলামই হচ্ছে একমাত্র মনোনীত দ্বিন (জীবনব্যবস্থা)।’

(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯)

এ অর্থেই দ্বিনকে পরিপূর্ণ হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।’
(সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩)

দ্বিনের প্রকৃত মর্ম নবীজি (সা.)-এর একটি হাদিসে পাওয়া যায়। হাদিসে জিবরাঈল নামে পরিচিত এক হাদিসে এ বিষয়ে সুন্দর আলোচনা এসেছে। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে জিবরাঈল (আ.) কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করেন।

তিনি তিনটি বিষয়ে প্রশ্ন করেন—ইসলাম, ঈমান ও ইহসান সম্পর্কে। প্রথমে জিজ্ঞাসা করেন, ইসলাম কী? এ সম্পর্কে আমাকে বলুন। জবাবে রাসুল (সা.) ইসলামের মূলকথা বলেন। আগন্তুক সমর্থন করলেন। দ্বিতীয়ত, জিজ্ঞাসা করলেন ঈমান সম্পর্কে।

জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈমানের বিস্তারিত পরিচয় দিলেন। আগন্তুক সত্যায়ন করলেন। তৃতীয়বার ইহসান সম্পর্কে জানতে চেয়ে বললেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইহসানের সারকথা বলে দিলেন। এরপর কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর করে তিনি চলে গেলেন। পরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রশ্নকারী আগন্তুক কে চিনতে পেরেছ? তিনি জিবরাইল (আ.)। তিনি এসেছিলেন তোমাদের দ্বিন শিক্ষা দেওয়ার জন্য।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ০৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৯৫)

এই হাদিসে আমরা দ্বিনের মূলকথা পেয়েছি। ইসলাম, ঈমান ও ইহসান হলো দ্বিনের বনিয়াদ। আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বিনের সঠিক পরিচয় জেনে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন!