মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

পরকালের সূচনা হয় মৃত্যুর পর থেকে। এর চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটবে কিয়ামত বা পুনরুত্থানের দিন। পরকালে বিশ্বাস ঈমানের মৌলিক স্তম্ভের অন্তর্ভুক্ত। মানুষ দুনিয়ায় যেসব কর্ম করেছে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন সেসব কর্মের হিসাব নেবেন।

মিজান বা পাল্লায় আমলগুলো ওজন করা হবে। যার খারাপ কাজের চেয়ে ভালো কাজের পাল্লা ভারী হবে, সে জান্নাতি হবে। যার ভালো কাজের চেয়ে খারাপ কাজের পাল্লা ভারী হবে, সে জাহান্নামি হবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর যার ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে, অচিরেই তার হিসাব-নিকাশ সহজ করা হবে।সে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে সন্তুষ্টচিত্তে ফিরে যাবে। কিন্তু যার আমলনামা তার পিঠের পেছনের দিক থেকে দেওয়া হবে, সে অচিরেই মৃত্যুকে ডাকবে এবং সে উত্তপ্ত জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা : ইনশিকাক, আয়াত : ৭-১২)

পরকালে আমার কী হবে—প্রত্যেক মুমিন এই চিন্তায় বিভোর থাকে। কিন্তু কোরআনের বর্ণনায় ১০ শ্রেণির মানুষ এমন আছে, পরকালে তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না।

এই ভয় না থাকার অর্থ হলো, পরকালে হিসাব-নিকাশের পর যখন তাদের যথাযথ মর্যাদায় জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে তখন সব ধরনের ভয় ও আশঙ্কা থেকে তারা মুক্ত হয়ে যাবে। কোনো কষ্ট তাদের অস্থির করে তুলবে না। কোনো বেদনা তাদের ব্যথিত করবে না। কেননা জান্নাত চিরসুখের ঠিকানা, চিরস্থায়ী নিবাস। আর এটাও সত্য যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যারা জান্নাতে যাবে, তাদের সবাই অনন্ত সুখ ভোগ করবে।

সেই ১০ শ্রেণির মানুষ হলো—

এক. সৎপথের অনুসারীদের কোনো ভয় নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘…যারা আমার সৎপথের নিদর্শন অনুসরণ করবে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩৮)

দুই. যারা আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী, পরকালে তাদের কোনো ভয় নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘…যারা আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, তাদের জন্য তাদের রবের কাছে পুরস্কার আছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৬২)

তিন. যারা আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করবে, তাদের কোনো ভয় নেই। জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের আলোকে জীবন যাপন করে পরকালে তাদের কোনো ভয় নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘হ্যাঁ, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে এবং সৎকর্মপরায়ণ হয়, তার প্রতিফল তার রবের কাছে আছে। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১১২)

চার. যারা গোপনে ও নিঃস্বার্থে আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের কোনো ভয় নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে অতঃপর ব্যয়ের কথা বলে বেড়ায় না এবং কষ্টও দেয় না, তাদের পুরস্কার তাদের রবের কাছে আছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬২)

পাঁচ. যারা প্রকাশ্যে-গোপনে এবং রাতে-দিনে দান-সদকা করে তাদের কোনো ভয় নেই। অর্থাৎ দিনে-রাতে, আলো-অন্ধকারে, প্রকাশ্যে-গোপনে মানুষের সেবা করা পরকালে নির্ভয় থাকার অন্যতম মাধ্যম। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ রাতে-দিনে গোপনে ও প্রকাশে ব্যয় করে তাদের পুণ্যফল তাদের রবের কাছে আছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৪)

ছয়. যারা সালাত কায়েম করে এবং জাকাত দেয় পরকালে তাদের কোনো ভয় নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, সালাত কায়েম করে এবং জাকাত দেয় তাদের প্রতিফল তাদের রবের কাছে আছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৭)

সাত. যারা নিজেকে সংশোধন করে নেয়, পরকালে তাদের কোনো ভয় নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘…কেউ ঈমান আনলে এবং নিজেকে সংশোধন করলে তার কোনো ভয় নেই এবং সে দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৪৮)

আট. যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে তাদের কোনো ভয় নেই। মুত্তাকি ও খোদাভীরুর পরকালে কোনো ভয় নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং নিজেদের সংশোধন করে নেয় তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩৫)

নয়. আল্লাহর অলিদের কোনো ভয় নেই। ‘সব সময় আল্লাহ আমাকে দেখছেন’—এই ধ্যান ও খেয়াল যার মধ্যে কাজ করে, সে-ই আল্লাহর অলি। এমন ব্যক্তিই আল্লাহর খাঁটি বান্দা। ইরশাদ হয়েছে, ‘জেনে রেখো! আল্লাহর অলিদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৬২)

দশ. নিজের ঈমান ও বিশ্বাসের ওপর অবিচল ব্যক্তির পরকালে কোনো ভয় নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ, অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের কাছে (মৃত্যুর সময়) অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা এবং তারা বলে, তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না। আর তোমাদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তার জন্য আনন্দিত হও।’ (সুরা হা-মিম সাজদা, আয়াত : ৩০